গালি মানুষের জীবনেরই অংশ: শরাফ আহমেদ জীবন

গালি মানুষের জীবনেরই অংশ: শরাফ আহমেদ জীবন

‘বোরহান’ কিংবা ‘লাবু কমিশনার’ এসব নামেই তিনি এখন বেশি পরিচিত। চরিত্রের সঙ্গে মিশে গিয়ে তার সাবলীল অভিনয় দর্শকের মুখে হাসি ফোটায় মুহূর্তেই। ওই হাসিটুকুই পরম প্রাপ্তি। নাম তার শরাফ আহমেদ জীবন। মূলত তিনি দেশের বিজ্ঞাপন জগতের অনেক সফল একজন নির্মাতা। এছাড়া নাটক পরিচালনায়ও দেখিয়েছেন মুন্সিয়ানা।

এবার তিনি নির্মাণ করতে যাচ্ছেন সিনেমা। সম্প্রতি সরকারি অনুদান পেয়েছেন। ‘বিচারালয়’ নামের একটি সিনেমার জন্য সরকার তাকে ৬৫ লাখ টাকা অনুদান দিচ্ছে। এটিই হতে যাচ্ছে তার প্রথম সিনেমা। অনুদান প্রাপ্তি, সিনেমা নির্মাণ এবং অভিনয়সহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই নির্মাতা-অভিনেতা কথা বলেছেন দৈনিক আগামীর সময়ের সঙ্গে। লিখেছেন সাঈদ

‘বিচারালয়’-এর গল্প যখন জমা দেন, তখন কি ভেবেছিলেন অনুদান পাবেন?

সরকারি বিষয়গুলোতে আসলে নিশ্চিতভাবে কেউই কিছু বলতে পারে না। গল্পের জায়গা থেকে একটা প্রত্যাশা ছিল যে, পেতেও পারি। আবার সংশয় ছিল, কারণ গল্পটা যিনি পড়বেন, তার চিন্তা-ভাবনা কেমন। যেমন আমার গল্পে আছে বিচার, ক্ষমা এসব বিষয়। কিন্তু যিনি পড়লেন, তিনি হয়ত কোনোভাবে নির্যাতনের শিকার। তার কাছে প্রতিশোধ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমার কাছে যেই গল্পটা ভালো লাগছে, সেটা আরেকজনের কাছে না-ও লাগতে পারে।

saraj ahmed jibon
শরাফ আহমেদ জীবন

নির্মাতা হিসেবে অনেক গল্প নিয়েই চর্চা করেন। এই গল্পটা কেন অনুদানের জন্য জমা দিয়েছিলেন?

আসলে অন্য একটি গল্প জমা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমার। কিন্তু হঠাৎ এই গল্পের প্লট মাথায় আসে। এরপর খুব দ্রুত লিখে ফেলি। কারণ গল্পটা আমাকে মানসিকভাবে পীড়া দিচ্ছিল। আমাকে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ভাই একবার বলেছিলেন, ‘কোনো গল্প যদি তোমার ঘুম হারাম করে দেয়, তাহলে সেটা কাজ করবে’। এই গল্পটা খুব সিম্পল। কিন্তু তার মধ্যেও অসামান্য গভীরতা আছে। সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, যদি সরকারি অনুদান না-ও পাই, যেভাবেই হোক সিনেমাটি বানাবো। এবং এটাই হবে আমার প্রথম সিনেমা।

সিনেমা আসলে কেন বানাতে চান?

আমি বিজ্ঞাপন, নাটক অনেক কিছু বানিয়েছি। কিন্তু প্রত্যেক নির্মাতার চূড়ান্ত গন্তব্য কিন্তু সিনেমা। নাটক, বিজ্ঞাপনকে যদি সিনেমার সঙ্গে তুলনা করি, তাহলে এগুলোর পরিসর খুবই ছোট। আরেকটা ব্যাপার হলো, আমি যখন শোবিজ জগতে পা রাখি, তখন কিন্তু নাটক কিংবা বিজ্ঞাপন বানানোর স্বপ্ন নিয়ে আসিনি। সিনেমা বানানোর স্বপ্ন নিয়েই এসেছি। এখন প্রশ্ন হতে পারে, সিনেমা শুরু করতে এত দেরি করলাম কেন। আসলে কিছু মানুষ খুব অল্পতেই পরিণত হয়ে যান। কিন্তু আমার আগে কখনো নিজেকে সিনেমার জন্য পরিণত মনে হয়নি। এখন মনে হয়েছে যে, সিনেমা বানানোর জন্য আমি প্রস্তুত।

শুটিং কবে নাগাদ শুরু করবেন?

আমার গল্পটা একটু শীত চায়। তাই আগামী শীতের শুরু অথবা শেষের দিকে শুটিং করার পরিকল্পনা আছে। আপাতত চিত্রনাট্যে কিছু ঘষামাজা করছি। সিনেমায় যারা অভিনয় করবেন, তাদের ব্যাপারে ভাবছি, আলোচনা করছি। এগুলো চূড়ান্ত হলে একটা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবো।

saraf ahmed jibon
শরাফ আহমেদ জীবন

অভিনেতা হিসেবেই আপনাকে এখন বেশি পাওয়া যায়। পরিচালক সত্তাটা কি আড়ালে পড়ে যাচ্ছে না?

এর উত্তর এক কথায় বললে- না। কারণ আমি নিয়মিত বিজ্ঞাপন বানাচ্ছি। সবার দোয়া-ভালোবাসায় বেশ দাপটের সঙ্গেই বিজ্ঞাপন নির্মাণ করে যাচ্ছি। কিন্তু এই সেক্টরের মানুষজন বরাবরই আড়ালে থেকে যান। তাই হয়ত এমন প্রশ্ন উঠছে। একটা ব্যাপার খেয়াল করুন, সাকিব আল হাসান যখন রেস্টুরেন্ট চালু করেন কিংবা অন্য কোনো ব্যবসা করেন, তখন কিন্তু তাকে বলা হয় না, ব্যবসার কারণে তার ক্রিকেট আড়ালে পড়ে যাচ্ছে কিনা। আরেকটা বিষয় হলো, অভিনয়, নির্মাণ এসব কিন্তু একটার সঙ্গে আরেকটা গভীরভাবে জড়িত। সুতরাং আমি একটা জগতেই কিন্তু আছি। একটার জন্য আরেকটা আড়াল হওয়ার সুযোগ নেই।

নাটকের বাজেট স্বল্পতা নিয়ে বছর খানেক আগেও আপনার আক্ষেপ ছিল। এখনো সেটা আছে কি?

সত্যি বলতে, গত দু’এক বছরে ইন্ডাস্ট্রির চিত্রটা অনেকটা বদলেছে। এখন আয়ের অনেক উৎস। টিভি চ্যানেলের পাশাপাশি বিভিন্ন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউব চ্যানেল। সুতরাং প্রযোজকের আয় যদি ভালো হয়, তাহলে কিন্তু বাজেট দিতে তার আপত্তি থাকে না। এই যেমন কিছুদিন আগেই কাজল আরেফিন অমির পরিচালনায় আমরা ‘গুড বাজ’ নামে একটা নাটকের শুটিং করে এসেছি। বিশাল একটা টিম নিয়ে কক্সবাজার গিয়েছি, সেখানে ভালো মানের হোটেলে থেকেছি, শুটিং করেছি। এরকম বড় অ্যারেঞ্জমেন্ট দু’বছর আগেও কিন্তু প্রায় অসম্ভব ছিল। এটা দেখেও বোঝা যায়, বাজেটের ব্যাপারটা উন্নত হয়েছে।

এই সময়ের বিভিন্ন নাটকে অতিরিক্ত ‘গালি’র অভিযোগ শোনা যায়। আপনিও সেরকম কয়েকটি নাটকে কাজ করেছেন। বিষয়টি নিয়ে কিছু বলার আছে?

এটার উত্তর দুইভাবে দেবো। প্রথমত, গালি কিন্তু মানুষের জীবনেরই অংশ। এটা আমি বা আমরা নতুন করে প্রচলন করছি, এমন না। যেমন ‘ফিমেইল’ বা ‘ব্যাচেলর পয়েন্ট’ নাটকে আমি অনেক গালি দিয়েছি। এখন আপনি যদি ওই চরিত্রগুলো খেয়াল করেন, সেগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড চিন্তা করেন, তখন কিন্তু বুঝবেন গালিটা সাধারণ। এই ধরণের মানুষ বাস্তবে অহরহ আছে। তারা কিন্তু এভাবে গালি দিয়েই কথা বলে। সিনেমা-নাটক এগুলো তো সমাজ, মানুষ ও সময়কে উপস্থাপন করে। এই তিনটা বিষয়ের সঙ্গে মিলিয়ে যখন কনটেন্টগুলো দেখবেন, তখন এই অভিযোগ আর থাকবে না। এবার দ্বিতীয় উত্তরটা বলি। দর্শক হিসেবে যদি কোনো কাজ আপনার পছন্দ না হয়, ভালো না লাগে, সেটা এড়িয়ে যান। যদি নির্মাতার প্রতি অভিযোগ থাকে, তাহলে তাকে বয়কট করুন। এমনকি মামলা পর্যন্ত করতে পারেন। এই অধিকার তো আপনার আছে। নির্মাতা তো কাউকে বাধ্য করছে না দেখার জন্য।

 

আপনি আরও পড়তে পারেন